মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি : বরীপ্রতীক উপাধিপ্রাপ্ত বিদেশি : উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড

উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অবদানের জন্য ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় সামরিক কমান্ডো অফিসার উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব বীর প্রতীক প্রদান করে। তিনিই একমাত্র বিদেশী যিনি এই রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ঔডারল্যান্ড ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে মারা যান।

ঔডারল্যান্ড ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে ঢাকায় বাটা স্যু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নেদারল্যান্ডস থেকে প্রথম ঢাকায় আসেন। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। প্রথমে তিনি ঢাকা সেনানিবাসের ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল সুলতান নেওয়াজের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এর পর লেফট্যানেন্ট জেনারেল টিক্কা খান, পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী, এডভাইজার সিভিল এফেয়ার্স মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিসহ আরো অনেক সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাদের সাথে তাঁর হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। নিয়াজীর ইস্টার্ন কমান্ড হেডকোয়ার্টার তাঁকে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসাবে সম্মানিত করে। এতে করে সেনানিবাসে যখন তখন যত্রতত্র যাতায়াতে তার আর কোন অসুবিধা থাকল না। এক পর্যায়ে তিনি পাকিস্তানিদের গোপন সংবাদ সংগ্রহ করা শুরু করলেন। সংগৃহীত সংবাদ তিনি গোপনে প্রেরণ করতেন ২নং সেক্টর এর ক্যাপ্টেন এ. টি. এম. হায়দার এবং জেড ফোর্সের কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান এর কাছে।

তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করতেন। তিনি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর প্রতীক পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় তাঁর নাম ২ নম্বর সেক্টরের গণবাহিনীর তালিকায় ৩১৭ নম্বর। ১৯৯৮ সালের ৭ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে ঔডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। তিনি বীর প্রতীক পদকের সম্মানী ১০,০০০ টাকা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে দান করে দেন।

সর্বকনিষ্ঠ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা
শহীদুল হক লালু নামে পরিচিত শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য সরকার তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। শহীদুল ইসলামের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার সূতী পলাশ গ্রামে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর বাবার নাম হেলাল উদ্দীন এবং মায়ের নাম সুধামণি। তাঁর স্ত্রীর নাম মালা বেগম। তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শহীদুল ইসলাম কাজের ছেলের ছদ্মবেশে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলায় অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিতে গিয়ে বিভিন্ন ফাই-ফরমাশ খেটে আস্থা অর্জন করেন। পরে গ্রেনেডসহ ঘাঁটিতে প্রবেশ করে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে ফিরে আসেন। তাঁর এই দুঃসাহসিক অভিযানে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীসহ আটজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। এসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। এর পর শহীদুল ইসলাম আরও কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post